ভারতের বিরুদ্ধে চীনের নতুন হাতিয়ার, বিপদে বাংলাদেশও!
অনেকেই বলে থাকেন, কমিউনিস্ট শাসিত চীনের শি জিং পিং প্রশাসন আগ্রাসন ও কর্তৃত্ববাদী নীতি নিয়ে এগুচ্ছে। উন্নয়নশীল ও নিম্ন আয়ের দেশগুলোকে বিভিন্নভাবে ঋণের জালে জড়িয়ে কৌশলগত সুবিধা নেয়ার অভিযোগ তোলাও হয় দেশটির বিরুদ্ধে। করোনাকালে ‘টিকা কূটনীতি’তেও বেশ সরব হতে দেখা গেছে বিশ্বের পরাশক্তি হতে চাওয়া চীনকে।
এমন প্রেক্ষাপটে প্রতিবেশী দেশ ভারতকে চাপে ফেলতে আন্তর্জাতিক নদীর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে দেশটি। এ ক্ষেত্রে নতুন হাতিয়ার করা হয়েছে হিমালয় থেকে নামা ব্রহ্মপুত্র নদকে।
চীন, ভারত ও বাংলাদেশে প্রবাহিত দীর্ঘতম এই নদে তিনটি বাঁধ দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে বেইজিং। উদ্দেশ্য নিজেদের অংশের ২৪ কিলোমিটারের মধ্যে তিনটি বৃহৎ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাস্তবায়ন। যা ভারত তো বটেই বাংলাদেশের জন্যেও খুবই উদ্বেগের বিষয়।
চীনের ভেতর দিয়ে বয়ে আসা ইয়ারলুং জ্যাংবো নদকেই ভারত ও বাংলাদেশে ব্রহ্মপুত্র নামে পরিচিত। জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য এই ব্রহ্মপূত্র নদের গতিপথে তিনটি বাঁধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় চীন। এর মধ্যে প্রথমটি জাঙ্গমো বাঁধ, যা ইতিমধ্যে চালু রয়েছে। দ্বিতীয়টি গায়তসা বাঁধ, যেটি নির্মিত হয়েছে এবং চালু হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। সর্বশেষ ডাগু বাঁধ, যেটি ২০১৭ সাল থেকে নির্মানাধীন রয়েছে এবং সর্ববৃহৎ বাঁধ হতে যাচ্ছে।
ভারতের সংবাদমাধ্যম জি নিউজকে একটি বিশ্বস্ত সূত্র বলেছে, ‘বাঁধ তিনটির প্রবাহপথ দিয়ে প্রায় এক বিলিয়ন ঘনমিটার পানি প্রবাহিত হতে পারে। এই বাঁধগুলোর কাছাকাছি মাত্র দেড়শ পরিবার নিয়ে একটি গ্রাম রয়েছে, তারপরও চীন এত ব্যয়বহুল একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এর পেছনে বেইজিংয়ের মূল উদ্দেশ্য নদীর প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং তিব্বত কে দিয়ে বিদ্যুৎ রপ্তানি করানো।‘
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়েক দিনের জন্য চীন পানি সরবরাহ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিলে তা ভারতের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে।
ভারত-বাংলাদেশ মিলে ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় প্রায় সোয়া ৬ কোটি মানুষ বসবাস করে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ কৃষক, যারা তাদের ফসল এবং গবাদি পশু পালনের জন্য এই নদের পানির ওপর নির্ভরশীল।
তাই অনেকের ধারনা, চলমান সীমান্ত বিরোধের মধ্যে নদীর প্রবাহ রোধ করে ভারতকে নিজেদের দাবি মানাতে বাধ্য করতে পারে চীন।
চীন দ্বারা ব্রহ্মপুত্র নদের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা কেবল ভারত নয় বাংলাদেশের জন্যেও উদ্বেগের বিষয়। ব্রহ্মপুত্র এবং এর উপনদীগুলি থেকে বাংলাদেশ ৯৪% পানি পেয়ে থাকে। যা মোট ২.৯ বিলিয়ন মেট্রিক টন।
সবশেষ যে বাঁধটি তৈরি করার কথা ভাবছে চীন, এর ফলে আসাম অঞ্চলে জমির উর্বরতাও কমে যেতে পারে। এছাড়া ব্রহ্মপূত্র নদের মোহনার প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হলে এই অঞ্চলের প্রকৃতি ও পরিবেশের উপরও মারাত্মক প্রভাব পড়বে।
দেশটির নেয়া সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলোর কারণে আন্তর্জাতিক মহলে বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে।